গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের ঐতিহ্য, বিশ্বাস, প্রথা, রীতিনীতি এসবই হল লোকসংস্কৃতির মূল ভিত্তি। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ হল লোকসংস্কৃতির আঁতুড়ঘর। লোককথা, লোককাহিনী, লোকগীতি, লোকশিল্প ইত্যাদি হাজারো অঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাংলার প্রান্তরে।
কখনও লোককাহিনী মিশে গেছে লিখিত ইতিহাসের সঙ্গে, কখনও বা পুরাণকথা, মৌখিক ইতিহাস ঘোরাফেরা করে লোককাহিনীর আনাচেকানাচে।
দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার (ওড়িশা সীমান্ত) দাঁতন থেকে পাঁচ/ছয় কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এক গ্রাম শরশঙ্কা। শরশঙ্কার বুকে অবস্থিত এক দীঘি (বৃহৎ জলাশয়) শরশঙ্কা দীঘি। এই জলাশয় ভিত্তিক ইতিহাস এবং পুরাণকথা বেশ প্রচলিত স্থানীয় মানুষদের মুখে।
পুরাতাত্ত্বিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলার নৃপতি শশাঙ্কের আদেশে স্থানীয় মানুষের জলের সমস্যা দূরীকরণে এই বিশালাকার দীঘি খনন করা হয়।
এই দীঘির খননের সঙ্গে জড়িত পৌরাণিক কাহিনীও প্রচলিত আছে শরশঙ্কা সহ পাশ্ববর্তী গাজীপুর, পাইকবাড়, শালিকোঠা এবং মেনকাপুরের মতো গ্রামগুলোয়। গ্রামের বয়স্কদের মুখে শোনা যায় শরশঙ্কা দীঘি খননের পৌরাণিক কাহিনী এবং শরশঙ্কার বিখ্যাত পৌষমেলার পৌরাণিক গল্প।
প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডব শরশঙ্কা দীঘি খনন করেন। দাঁতনের বিদ্যাধর পুষ্করিণীও তাঁরাই খনন করেন। স্থানীয়দের মুখে, 'বিদ্যাধর আড়া' নামে পরিচিত। মহাভারতের কাহিনি অনুসারে, পাশাখেলায় পরাজিত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পান্ডব ভাইয়েরা এবং দ্রৌপদী ১২ বছরের বনবাস এবং ১ বছরের অজ্ঞাতবাস কাটানোর জন্য রাজবাড়ী ত্যাগ করেন। বিভিন্ন বনাঞ্চল ঘুরে বঙ্গদেশ হয়ে এই পথেই তৎকালীন কলিঙ্গ দেশের বনে যাচ্ছিলেন। শরশঙ্কার কাছে দ্রৌপদীর ও নকুলের প্রবল তৃষ্ণা পায়। কিন্তু এলাকায় তেমনভাবে জলের সন্ধান পাননি। গ্রামবাসীদের মুখে এই এলাকার জলের সমস্যার কথা শোনেন। সমস্যা সমাধানে বিশাল বড় জলাশয় খনন করেন আর দাঁতনেও খনন করেন এক জলাশয়,যাতে গ্রীষ্মকালে প্রবল তাপদাহেও জল কষ্ট না হয় সেই কারণে শরশঙ্কা এবং দাঁতনের জলাশয় দুটিকে গোপন সুড়ঙ্গপথে যুক্ত করেন।
যদিও কখনও শরশঙ্কা পুষ্করিণীর জল শুকিয়ে যায়নি এ পর্যন্ত। স্থানীয় বয়স্কদের মুখে শোনা যায়, বেশ কিছু বছর আগে দীঘির জল নিষ্কাশনের জন্য গ্রামবাসী সহ পাশ্ববর্তী এলাকার লোকেরা মিলে বেশ কয়েকটি যন্ত্রচালিত টিউবওয়েল ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন। পুষ্করিণী থেকে জল সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়নি।
ক্রমশ...
বিঃদ্রঃ - সম্পূর্ণ তথ্য প্রচলিত লোককথা ও লোককাহিনী অনুসারে বিবৃত। এলাকার বয়স্ক মানুষদের মুখে প্রচলিত কাহিনীকেই লেখ্য রূপ দেওয়া হয়েছে। লেখকের শোনা প্রচলিত কাহিনীর ভিত্তিতেই লেখক এই 'পরিচ্ছদ' লিখেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ