আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও তার ইতিহাস


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও তার ইতিহাস

  •  আমাদের বাংলা ভাষা: প্রাসঙ্গিকতা, আধুনিকতা

২১ শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের বাঙালিদের গর্ব করার দিন। গর্ব করার দিনই বটে। বছরের ৩৬৪ দিন তো আমরা বাংলা ভাষাকে তথা মাতৃভাষাকে কেমন যেন টেনে হিঁচড়ে হিন্দি, ইংরেজির মতো করার চেষ্টা করি। কখনো এর উল্টো পথে কি আমরা হেঁটেছি। পৃথিবীর সুমিষ্ট ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম এই বাংলা ভাষা। আমাদের মাতৃভাষা। জৌলুস হয়তো নেই, নেই এত বলার বাহার। ইংরেজির মতো এত কঠোর উচ্চারণে, ভঙ্গিতে বলার প্রয়োজন পড়ে না। সহজ, সারল্যপনায় রস মাখানো ভঙ্গিতে অনায়াসেই "মা" ডাকা যায়।

এত কথায় দরকার নেই। শুধু একটা কথাই যথেষ্ট।

"ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা,আমার ছেলের,বাংলাটা ঠিক আসেনা।"

বর্তমানে বাঙালিয়ানার অন্তরঙ্গ সঙ্গী বাংলা ভাষা নয়, ইংরেজি। ছেলে ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্র। শেক্সপিয়ার,টলস্টয় পড়ে। ছেলের নামটাও ঐ হিন্দি মেশানো বাংলা। আসলে ওর ঠাকুরদার চাপে বাংলা ছোঁয়া রাখতে হল। নাহলে এখন এসব গেঁয়ো পুরনো নাম চলে না। রবিঠাকুর, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ পড়ার সময় খুব কম। পদার্থবিজ্ঞান নয়, ফিজিক্সের আলোক তত্ত্বের জটিল সূত্রের মুখস্থ করবার থেকে অবকাশ পেলেই তো ও বঙ্কিমচন্দ্র পড়বে। আর হবেই বা কি বঙ্কিমচন্দ্র পড়ে। বিদেশে চাকরি করতে গেলে বিদেশী আদব-কায়দা জানা দরকার। তা তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা নজরুল পড়ে পাবেন না। আপনাকে বব ডিলানের গান শুনতে হবে, মাইকেল জ্যাকসনকে কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প এরাও বেশ। তাছাড়া যদিও বা দেশেই থাকে, পশ্চিমবঙ্গের সিভিল সার্ভিস দেবে। বড় অফিসার হবে। প্রশ্নের সে তো ইংরেজিতেই মুখোমুখি হবে। অপশনাল বাংলায় দেওয়া যায়, কিন্তু ঐ নাম্বার তো ইংরেজি ভাষায় লিখলেই বেশি পাওয়া যায়। দেশের সর্বোচ্চ UPSC দেবে। দেখছেন না, দিন দিন হিন্দি ভাষার পাশ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যাই কমে যাচ্ছে, সেখানে বাংলা তো কোন ছারপোকা।

  • বাঙালির মেকি বাংলা প্রেম এবং বাস্তবতা

এই রূপ মানসিকতায় ভরা মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত বাঙালিটিও ২১ শে ফেব্রুয়ারি ফেসবুক কিংবা টুইটার, নিদেনপক্ষে হোয়াটসঅ্যাপে বিশাল এক লেখা লেখেন। " 'রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত' এদের বাংলা ভাষা রক্ষার সংগ্রাম ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবে। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আমার জন্মগত অধিকার,.... আমরি বাংলা ভাষা" ইত্যাদি ইত্যাদি।

  • মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস

হ্যাঁ। বাংলা ভাষার জন্য লড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বাঙালি যুবক রফিক, শফিউলরা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বর্তমান বাংলাদেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান পাকিস্তানের অধীনে যায়। পাকিস্তান তাঁর মাতৃভাষা উর্দুকে সমগ্ৰ দেশের জাতীয় ভাষা করতে চায় এবং কথা মতো কাজও হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ৯৫% মানুষের ভাষা বাংলা। তাদের উর্দু বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান টুকুও হয়তো ছিল না। কিন্তু ঐ অজানা ভাষায় তাদের শিক্ষা গ্ৰহন করতে হবে। সরকারি অফিস, আদালতে কার্য সম্পাদন করতে হবে। যা কোনো স্বাধীনচেতা জাতির পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। শুরু হল প্রতিবাদ, আন্দোলন।

ঢাকায় ছাত্ররা তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেমের নেতৃত্বে র‍্যালি বের করে। বৈঠকে বাংলাকে পাকিস্তানের একটি সরকারি ভাষা এবং পূর্ব বাংলার শিক্ষার মাধ্যম করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে,

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। এতে বাঙালি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয় এবং ছাত্রদের একটি বড় অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাকে একটি সরকারী ভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে অন্যতম হল রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই ঘটনার বহু সময় পর ২০১০ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

বাংলাভাষা বিশ্বের দুইটি দেশের রাষ্ট্রভাষা, বাংলাদেশ এবং সিয়েরা লিওন। এছাড়াও ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের 95% মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন।


FAQ

1.আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস কোন দিন পালিত হয়?
প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

2. বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছে এমন দুজন বাঙালির নাম বলো?
হাজার ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বাঙালি যুবক রফিক, শফিউলরা।

3.কত সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়?
5 ই আগস্ট 2010 খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ