কলকাতার দর্শনীয় স্থান | কম খরচে কলকাতা ভ্রমন


কলকাতার দর্শনীয় স্থান

 তিলোত্তমা নগরীর ইতিহাস, সৌন্দর্য, শিল্প- স্থাপত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং দর্শনীয় স্থান এককথায় অনবদ্য কাহিনী বর্ণনা করে। কলকাতা হল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী এবং পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে বড় মেট্রো শহর। হুগলি নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত কলকাতা।

প্রিয় পাঠক এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কলকাতার দর্শনীয় স্থান গুলির নাম এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ।যে গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

1. জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

2. চীনা কালী মন্দির

3. কফি হাউজ

4. প্রিন্সেস ঘাট

5. কালীঘাটকালীঘাট

6. বোটানিক্যাল গার্ডেন

7. দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির

8. আলিপুর চিড়িয়াখানা

9. ইকোপার্ক

10. জাদুঘর

11. কলেজ স্ট্রিট

12. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল



কলকাতা


অবস্থান ২২°৩৪'২২'' উত্তর ৮৮°২১'৫০'' পূর্ব
দেশ ভারত
রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
জেলা কলকাতা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মহানগরীর মেয়র ফিরহাদ হাকিম
মহানগরীর আয়তন ২০৮.৬ বর্গকিমি (৮০.৫ বর্গমাইল)
উচ্চতা ৯ মিটার (৩০ ফুট)
সময় অঞ্চল ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউপিসি +০৫:৩০)
সরকারি ভাষা বাংলা
ওয়েবসাইট www.kmcgov.in


আরো পড়ুন:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী ও অজানা কিছু ঘটনা!




 দর্শনীয় স্থান গুলির নাম এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

প্রথমেই আসি প্রিয় নগরীর এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান রবি ঠাকুরের জন্মভিটে-তে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি কলকাতার জোড়াসাঁকোতে অবস্থিত ঠাকুর পরিবারের প্রাচীন বাড়ি। এই বাড়িটি বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই ঐতিহ্যবাহী গৃহে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এনাদের পূর্বপুরুষ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, তাঁর সুনামধন্য পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কোলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে ঠাকুরবাড়ির নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত এক অধ্যায়।

এটি আঠারো শতকে দ্বারকানাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ) নির্মাণ করেন। ঘুরে আসতে পারেন কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত এই পূর্ণভূমিতে।


চীনা কালী মন্দির

পরের বিখ্যাত স্থান ট্যাংরার কালী বা চীনা কালী মন্দির। চীনা কালী পূর্ব কলকাতার ট্যাংরায় ভারতীয় চীনাদের প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দির। আনুমানিক ৬০ বছর আগে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া চীনারা টেরিটি বাজার অঞ্চলেও থাকেন।

চা এবং চিনি শিল্পের জন্য বা ব্যবসার জন্য ভারতে আসা চিনারা আপন করে নিয়েছেন এই দেশকে। ওখানে গেলে দেখতে পাবেন এবং অনুভব করতে পারবেন," লোকেরা হল চাইনি। কিন্তু হৃদয় হিন্দুস্থানী।" 

ষাট বছর আগে একজন চীনা ভদ্রলোক এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ধর্মে ছিলেন চৈনিক বৌদ্ধ। বর্তমানে তার তৃতীয় পুরুষ এই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। তবে পূজার দায়িত্বে একজন হিন্দু পুরোহিত আছেন।

বিশেষত্ব হল এখানে ভোগ হিসাবে মা কালীকে চাইনিজ খাবার দেওয়া হয়। তবে সেই নুডুলস বা চাউমিন নিরামিষ। অন্য সকল পূজার মতো ফল প্রসাদের সাথে নুডুলসকেও প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয়।


কফি হাউস

তৃতীয় একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হল কোলকাতার বিখ্যাত কফি হাউস। 'কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস' উত্তর কলকাতার বইপাড়ার কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত একটি কফি হাউস বা রেঁস্তোরা। ঐতিহ্যবাহী ও বাঙালির আড্ডাস্থল এই কফি হাউসটি কলকাতার কফিহাউসসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম। এটি ইন্ডিয়ান কফি হাউসের একটি স্থানীয় শাখা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টোপাশে অবস্থিত কফি হাউসটি কলকাতার সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং এটি বুদ্ধিজীবিদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের একসময়ের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, নাট্যকার, অভিনেতা, ঔপন্যাসিক সবাই একসঙ্গে আড্ডা মারতেন ওখানে। গিরিশচন্দ্র ঘোষ থেকে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সবারই পদ স্পর্শে ধন্য হয়ে উঠেছে কফি হাউসের ভূমি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরানো বইয়ের বাজার ও নতুন বইয়ের বাজার সামনে আছে বলে হাউসটিতে সব সময়েই ভিড় থাকে। চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়, বাঙালি অভিনেতা রূদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর মত প্রমুখ ব্যক্তিরাও কোন না কোন সময়ে এই কফি হাউসটিতে আড্ডা দিয়ে গেছেন।

সংক্ষেপে এই কফি হাউসটি কলেজ স্ট্রিটের মর্মস্থলে অবস্থিত যেখানে প্রখ্যাত সব বুদ্ধিজীবিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক কাপ কফি নিয়ে আড্ডা জমান। পূর্বে অ্যালবার্ট হল নামে পরিচিত এই হলঘর বহু ঐতিহাসিক সভা বা জমায়েতের সাক্ষী।


প্রিন্সেপ ঘাট

তিলোত্তমা নগরীর বিশেষ দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল প্রিন্সেপ ঘাট। জেমস প্রিন্সেপ যিনি অশোকের ব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধার করেছেন তাঁর নামানুসারে কোলকাতা নগরীর এই ঘাটের নাম হয়। প্রিন্সেপ ঘাট থেকে কদমতলা পর্যন্ত নদীতীরের উদ্বোধন করা হয়েছে 2012 সালে।


কালীঘাটকালীঘাট

একান্ন তীর্থের অন্যতম পীঠস্থান কোলকাতার কালীঘাটকালীঘাট এবং কালীমন্দির। পুরাণ মতানুসারে,এখানে সতীর পায়ের আঙ্গুল পড়েছিল। শান্ত নিশ্চূপ এখানকার পরিবেশ। সময় কাটানোর মতো উপযুক্ত স্থান।


বোটানিক্যাল গার্ডেন

হাওড়া শিবপুরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক উদ্ভিদ উদ্যান বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই উদ্যানে মোট ১৪০০ প্রজাতির প্রায় ১৭ হাজারটি গাছ রয়েছে এই উদ্যানে। ২৭৩ একর আয়তনবিশিষ্ট এই উদ্যানটি শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত। এখানে অবস্থিত বটবৃক্ষ আড়াইশো বছরের অধিক প্রাচীন। যদিও বটবৃক্ষের মূল শিকড় এখন আর নাই,কিন্তু শাখাপ্রশাখায় এখনও জীবিত বটবৃক্ষ।


দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির

রাণী রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম পীঠস্থান। এখানেই পরমহংস রামকৃষ্ণদেব তাঁর লীলা সম্পন্ন করেন। গঙ্গার তীরে মনোরম পরিবেশে শান্ত স্নিগ্ধ বাতাসে সময় অনায়াসেই অতিবাহিত করা যায়।


আলীপুর চিড়িয়াখানা

কোলকাতার আলীপুর চিড়িয়াখানা। হরেক রকম প্রাণী থেকে শুরু করে পাখিতে ভরপুর এই চিড়িয়াখানা। বাঘ, সিংহ, গন্ডার থেকে শুরু করে জলজ অজগর, জানা অজানা সাপ, সরীসৃপ সবেরই দেখা পাবেন এই চিড়িয়াখানায়।


ইকো পার্ক

কলকাতার রাজারহাটে অবস্থিত ইকো পার্ক উদ্যানটি ভারতের বৃহত্তম উদ্যান, এই পার্কের মধ্যে বিশাল জলাশয় আছে, মাঝখানে একটি দ্বীপ আছে, যেখানে খাবার রেস্তোরা ও থাকার হোটেল আছে। ইকো পার্কে মোট ছটি গেট আছে।


জাদুঘর

কোলকাতা জাদুঘর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের প্রাচীনতম জাদুঘর। ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, নথি এখানে পাওয়া যায়। প্রায় আট হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই জাদুঘর। বহু সংগ্ৰহশালা রয়েছে।


কলেজ স্ট্রিট

বইপ্রেমীদের সময় অতিবাহিত করার এক অনন্য স্থান কোলকাতা কলেজ স্ট্রিট। পৃথিবীর বৃহত্তম বাংলা বইয়ের বাজার এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরনো বইয়ের বাজার। সারি সারি বইয়ের মধ্যে একবার হারিয়ে গেলে সময়ের চিন্তা মাথাতেই আসবে না। পাশে রয়েছে বিখ্যাত কফি হাউস, সেখানেও সময় বেশ ভালো কাটতেই পারে।


ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল কলকাতা একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধ হিসেবে দিকে বানানো হয়েছিল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯০৬ সালে এবং সম্পূর্ন হয় ১৯২১ সালে। এটি সম্পূর্ণ শ্বেত পাথরে বিয়ে তৈরি। মেমোরিয়াল এর দৈর্ঘ্য 338 ফুট প্রস্থ 228 ফুট এবং উচ্চতা 184 ফুট।



আরো পড়ুন:- 2022 সালের দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট, লক্ষ্মীপূজো কালীপূজো তারিখ



  • FAQ


1. কলকাতার জন্ম কত সালে?

১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট জন চার্নকের দারা কলকাতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

2. কলকাতার অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ অবস্থান কত?

২২°৩৪'২২'' উত্তর ৮৮°২১'৫০'' পূর্ব

3. কলকাতা মহানগরীর আয়তন কত?

২০৮.৬ বর্গকিমি (৮০.৫ বর্গমাইল)

4. কলকাতার দর্শনীয় স্থান গুলি কী কী?

  • কফি হাউজ
  • প্রিন্সেস ঘাট
  • কালীঘাট 
  • দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির
  • বিড়লা পেরিটোনিয়াম
  • ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
  • বোটানিক্যাল গার্ডেন
  • সাইনসিটি
  • আলিপুর চিড়িয়াখানা
  • জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি
  • নন্দন 
  • ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
  • ন্যাশনাল লাইব্রেরী
  • কলেজস্ট্রিট
  • ভাসমান বাজার
  • স্নো পার্ক
  • স্টেট পলস ক্যাথিড্রাল
  • ইকো পার্ক
  • নিক্কো পার্ক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ