সাল 1929,ভারত তখন ব্রিটিশ শাসনাধীন। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারত এবং ভারতের বাইরে সংগঠিত হচ্ছে হিংস্র এবং অহিংস আন্দোলন। কংগ্রেস তখন ভারতের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলরূপে নিজস্ব স্বকীয়তা প্রস্ফুটিত করতে শুরু করেছে। যুব সমাজের নেতৃত্বে লাহোরে এই বৎসরেই কংগ্রেসের পূর্ণ স্বরাজের দাবী জোরদার হয়। এই বৎসরেই ভারতের বুকে জন্ম নেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এক মারাঠি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পরবর্তীকালের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। দীনানাথ মঙ্গেশকর এবং শিবন্তির জৈষ্ঠ্য সন্তান গৃহ আলো করে জন্ম নেন। নাম হেমা। যদিও পরবর্তীকালে তিনি অন্য নামে ভারত বিখ্যাত হয়েছিলেন।
ভারতরত্ন সহ বহু পুরস্কারের প্রাপক লতা মঙ্গেশকর আজ মহাকাশের কোনো এক ছায়াপথের হাজারো হাজারো নক্ষত্রের মধ্যে এক নক্ষত্র হয়ে গেছেন। সমাপ্তি ঘটেছে এক স্বর্ণযুগের। সরস্বতী দেবীর বিদায়ী লগ্নে চিরবিদায় নিয়েছেন মা সরস্বতীর মর্ত্য কন্যা লতা মঙ্গেশকর। যাঁর কন্ঠ শুধু ভারত নয় উপমহাদেশের সমস্ত শ্রেণীর সমস্ত মানুষের দুঃখ, সুখে,ক্ষুধায়, ক্রন্দনে বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। তাঁর গানে বিহ্বল হয়ে পড়ে অগণিত কঠোর মনের মানুষও।
সেদিনের সেই ছোট্ট শিশুকন্যা থেকে ভারতের বলিউডের নাইটিঙ্গেল হয়ে ওঠার পিছনে সুদীর্ঘ সংগ্রাম, কষ্ট সবকিছু মিলিয়ে আজ তিনি অবিনশ্বর। "আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের", "প্রেম একবারই এসেছিল", "রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে", "না যেও না রজনী এখনও", "ওগো আর কিছু তো নাই", "আকাশ প্রদীপ জ্বলে", "একবার বিদায় দে মা", প্রভৃতি মন জয় করা বাংলা গানেও তিনি রেখে গেছেন তাঁর ছাপ, তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। হিন্দি গানের জগতে তো তিনি মহারানী। "আয়েগা আনেওয়ালা (মহল)", "আজা রে পরদেসি (মধুমতী)", "পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া (মুঘল-ই-আজম)", "আল্লা তেরো নাম (হম দোনো)", "অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো", "লগ যা গলে (ওয়োহ কৌন থি)", "আজ ফির জিনে কি (গাইড)", "রহে না রহে হম (মমতা)", "তু জাঁহা জাঁহা চলেগা (মেরা সায়া)" প্রভৃতি গান প্রত্যেক সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে আজও সমানভাবে উত্তেজনার বিষয়, আবেগের আর এক রূপ।
অল্প বয়সে পিতৃহারা হয়ে ছিলেন লতা'জী। সংসারের দায়িত্বই তাকে গান গাইতে উৎসাহিত করে। পরবর্তীতে তিনি গানকেই তাঁর সংসার করে তোলেন। জীবনে প্রথমবার একটা নাটকে অভিনয় করেন পিতার সৌজন্যে। পিতার সৌজন্যে সিনেমা জগতে প্রবেশ করলেও পরবর্তীকালে পিতার বন্ধুর আনুকূল্যে সিনেমায় প্লেব্যাক সিঙ্গারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। তাতেই আসে সফলতা।
ভারত থেকে অসংখ্য পুরস্কারের পাশাপাশি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান লিজিয়ন অব অনার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।জাতীয় পুরস্কার,দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন লক্ষ কোটি সংগীত প্রেমীর ভালোবাসা, স্নেহ এবং সৌজন্য।
আকাশের তারা হয়েও তিনি জীবিত আছেন প্রতিটি ভারতীয়র হৃদয়ে, তাদের ভালোবাসায় আর অসংখ্য গানে।
0 মন্তব্যসমূহ