যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে সময়ে মেডিকেল সাইন্স অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে আপনি বাড়িতে বসে খুব সহজেই আপনি অন্তঃসত্ত্বা হলেন কিনা পরীক্ষা করতে পারবেন প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর মাধ্যমে। এটি ৯৯% সঠিক ফলাফল দিয়ে থাকে। মিলনের পর সঠিক সময়ে মাসিক না হলে প্রতিটি মহিলার মধ্যেই তৈরি হয় নানা প্রশ্ন, আমি গর্ভবতী হলাম কিনা। মাসিক মিস হওয়ার কতদিন পরে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হবে তাও অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। গর্ভধারণ করলে শরীরে বিটা এইচসিজি (HCG) নামে এক প্রকারের হরমোন উৎপন্ন হয়, যার উপস্থিতির প্রসাব এর মধ্যেও পাওয়া যায়। আপনি চাইলেই আপনার প্রসাদ প্রেগনেন্সি টেস্ট টিউবের মাধ্যমে পরীক্ষা করে খুব সহজেই জানতে পারবেন আপনি অন্তঃসত্ত্বা হলেন নাকি।
প্রিয় পাঠক এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন প্রেগনেন্সি টেস্ট কিটের মাধ্যমে গর্ভধারণ পরীক্ষা, মাসিক মিস হওয়ার কতদিন পর টেস্ট করতে হয়, প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক পদ্ধতি, কোন প্রেগনেন্সি কিট সবথেকে ভালো, এছাড়াও প্রেগনেন্সি পরীক্ষা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য।
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিটের মাধ্যমে গর্ভধারণ পরীক্ষা
গর্ভধারণ প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রেই একটি আনন্দদায়ক ঘটনা। তবে অনেক ক্ষেত্রে আমি গর্ভবতী হয়েছি কিনা সেটি প্যাথলজি সেন্টারে গিয়ে টেস্ট করতে অসুবিধা হয়ে থাকে। সেই কারণে বাড়িতে পরীক্ষা করার উপায় খোঁজেন অনেকেই। বর্তমান মেডিকেল সাইন্স এই ব্যবস্থাটিকে আরো সহজ করে তুলেছে, প্রেগনেন্সি কিট এর মাধ্যমে। আপনি গর্ভবতী হয়েছে কিনা প্রেগনেন্সি কিট এর মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে ৯৯% সঠিক রিপোর্ট পেয়ে যাবেন।
মাসিক মিস হওয়ার কতদিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয়
সঙ্গমের পর মাসিক মিস করলে প্রত্যেকটি নারীর মধ্যে একটি উদ্দীপনা কাজ করে। ওই মুহূর্তে আপনি গর্ভধারণ করতে চান বা নাইচান। পিরিয়ড মিস হওয়ার পরে অনেকে বুঝতে পারেন না ঠিক কতদিন পরে পরীক্ষা করলে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে। প্রত্যেকটি মহিলা কেবলমাত্র গর্ভবতী হলেই তাদের শরীরে এইচসিজি (HCG) নামে এক প্রকার হরমোন উৎপন্ন হয়। আর এই হরমোনের উপস্থিতি ইউরিন পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়। পিরিয়ড মিস হওয়ার কমপক্ষে সাত থেকে দশ দিন পরে পরীক্ষা করুন। খুব তাড়াতাড়ি করলে সঠিক রিপোর্ট হয়তো নাও দিতে পারেন। আর যাদের নিয়ম মেনেই পিরিয়ড হয় অর্থাৎ মাসিক চক্র ঠিকঠাক সময়মতো হয়না তাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড মিস হওয়ার ৩০-৩৫ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করা উচিত।
গর্ভধারণ পরীক্ষা কখন করবেন
যাদের মাসিক নিয়মিত হয় তাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড মিস হওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট কিটের মাধ্যমে টেস্ট করলে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায়। আর যাদের মাসিক নিয়মিত হয় না তাদের ক্ষেত্রে বাড়িতে টেস্ট টিউবের মাধ্যমে পরীক্ষা করাটা একটু কঠিন হয়ে উঠে। তবে পিরিয়ড মিস হওয়ার ৩০ থেকে ৩৫ দিনের পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যায়।
প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক পদ্ধতি
সকালের প্রথম ইউরিন এর মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট সবথেকে ভালো হয়, এক্ষেত্রে রেজাল্ট খুব সহজে এবং সঠিকভাবে পাওয়া যায়। সকালের ইউরিন না হলেও প্রেগনেন্সি টেস্ট করা যাবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে পাত্রের মাধ্যমে ইউনিয়ন অনেকক্ষণ সংরক্ষণ করতে হবে। প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়। বিভিন্ন টেস্ট ক্রিকেটের টেস্টিং পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কোনোটাতে আপনাকে ড্রপ এর মাধ্যমে ইউরিন ফেলতে হয় আবার কোনোটিতে ইউরিন এর মধ্যে টেস্ট কিট টিকে ডোবাতে হয়। এক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর সঙ্গে প্রদত্ত নিয়মাবলী ভালো করে পড়ে নিয়ে তবেই পরীক্ষাটি করা উচিত।
বাড়িতে গর্ভধারণ পরীক্ষার রিপোর্ট কিভাবে বুঝবেন
এরপরে আপনাকে 10 মিনিট অপেক্ষা করতে হবে, প্রেগনেন্সি কিটটিতে দুটি স্পষ্ট রঙ্গীন রেখা বা লাইন এলে বুঝবেন রিপোর্ট পজেটিভ অর্থাৎ আপনি অন্তঃসত্ত্বা। যদি অস্পষ্ট দুটি রেখা আসে সেক্ষেত্রে আপনি অন্তঃসত্ত্বা। আবার যদি প্রেগনেন্সি কিটটিতে একটি উজ্জ্বল দাগ আসে তাহলে আপনি নেগেটিভ অর্থাৎ অন্তঃসত্ত্বা নন।
অনেক ক্ষেত্রেই কিটের গায়ে কোন দাগ বা রেখা তৈরি হয় না সে ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি অগ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেয়া হয় অথবা প্রথমে কিটিতে একটি দাগ থাকার আধঘন্টা অথবা এক ঘন্টা পরে দুটি দাগ লক্ষ্য করা গেলে সেক্ষেত্রেও পরীক্ষাটি অগ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আপনাকে আরো একটি প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
কোন প্রেগনেন্সি টেস্ট সবথেকে ভালো
বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রেগনেন্সি কিট পাওয়া যায় প্রায় সবকটিতেই নির্ভুলভাবে পাওয়া যায়, ৯৯% সঠিক রেজাল্ট দেয় এই প্রেগনেন্সি কিট গুলি। যার মধ্যে কয়েকটি কিট হল-
1.
2.
3.
বাড়িতে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর সাহায্যে পরীক্ষা করলে যেগুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ
বাড়িতে প্রেগনেন্সি কিট এর মাধ্যমে আপনি যেদিন প্রেগনেন্সি টেস্ট করেন তাহলে বেশ কিছু জিনিস অবশ্যই মেনে চলবেন। না হলে সঠিক রেজাল্টের পেতে অনেক সমস্যায় পড়তে পারেন।
1. ফার্মেসি থেকে প্রেগনেন্সি কিটে কেনার আগে অবশ্যই কিটির ব্যবহারের শেষ তারিখ (Expiry Date) দেখে নেবেন। তারিখ পেরিয়ে গেলে আপনি কোটি তারা সঠিক রেজাল্ট পাবেন না।
2. সকালের ইউরিন এর দ্বারা পরীক্ষাটি করলে সঠিক রেজাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। তাই সকালের ইউরিন দিয়ে পরীক্ষাটি করতে হবে।
3. পরীক্ষাটি শুরু করার আগে টেস্ট কিটে দেয়ার নিয়মাবলী ও অবশ্যই একবার পড়েনিতে হবে।
4. পরীক্ষা শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
5. টেস্ট কি কি পরীক্ষা করার পর যদি ফলাফল নেগেটিভ আছে, তাহলে 72 ঘন্টা পরে আবার পরীক্ষা করুন, ফলাফল নেগেটিভ পেলে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন আপনি অন্তঃসত্ত্বা নন পারলে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রিপোর্ট নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না
বাড়িতে প্রেগনেন্সি টেস্ট নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না, এক্ষেত্রে আপনাকে পরীক্ষা করার সাতদিন পরে আবার প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে হবে সেক্ষেত্রেও যদি ফলাফল নেগেটিভ এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শুধুই প্রেগনেন্সির কারণেই যে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এমনটা কিন্তু নয়, মানব শরীরে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির কারণে অনেক সময় মাসিক নির্ধারিত সময় হয়না। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী।
বাড়িতে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা কতটা সঠিক
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট ৯৯% সঠিক রেজাল্ট দেয়। তাই বাড়িতে বসেই প্রেগনেন্সি টেস্ট বর্তমানে অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু নিজেদের ভুলের কারণে কয়েকটি সময় ফলাফল সঠিক পাওয়া যায় না। উপরের দেওয়ার নিয়ম গুলি ফলাফল সঠিক পাবেন আপনি। তবে কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
বাড়িতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা উপায়
বর্তমান সময়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেডিকেল সাইন্স অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। তবে আজ থেকে কয়েকশো বছর পিছিয়ে গেলে দেখা গিয়েছে বাজারে পাওয়া যেত না এই ধরনের প্রেগনেন্সি কিট। ডাক্তার, হসপিটাল, নার্সিং হোমের সু-ব্যাবস্থাও ছিল না ওই সময়। সেই সময় চিকিৎসা বিদ্যায় সবথেকে জনপ্রিয় পদ্ধতি ছিল আয়ুর্বেদ। দিদিমা ঠাকুরমারা বাড়িতে পরীক্ষা করেই নির্ভুল ফলাফল দিতে পারতেন। আজ এই প্রতিবেদনের শেষে বাড়িতে থাকা সামগ্রী দিয়ে দিদিমা-ঠাকুমার সেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পদ্ধতি গুলি জেনে নিবো
a. চিনি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট
চিনি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য আপনাকে সবার প্রথমে একটি কাচের বাটি নিতে হবে, তাতে সকাল থেকে সংগ্রহ করা ইউরিনে দুইটি চামচ চিনি দিতে হবে। যদি চিনিতে সম্পূর্ণভাবে মিশ্রিত হয়ে যায় ইউনিয়নের সঙ্গে তাহলে আপনি গর্ভবতী নয়। যদি চিনতি ইউরিন এর সঙ্গে মিশ্রিত না হয় তাহলে এটি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।
b. নুন দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট
এক্ষেত্রেও আপনাকে একটি কাঁচের পাত্র নিতে হবে। সকালের ইউরিন সংগ্রহ করতে হবে এবং কিছু পরিমাণ লবণ নিতে হবে।
কাচের পাত্রটিকে কিছু পরিমাণ লবণ দিয়ে তার ওপরে ড্রপার এর মাধ্যমে ইউরিন ফেলতে হবে। মিনিট পাঁচেক পরে যদি আপনি দেখেন ইউরিনের সঙ্গে নুনের কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া চলছে অর্থাৎ কোন ধরনের বুদবুদ উৎপন্ন হচ্ছে তাহলে এটি প্রেগনেন্ট হওয়ার লক্ষণ।
গর্ভধারণের পরীক্ষা: প্রেগনেন্সি কিট পরীক্ষার সহজ উপায় | পিরিয়ড মিস, প্রেগনেন্সি টেস্টের সঠিক সময় -- FAQ
1. মেয়েরা গর্ভবতী হলে শরীরে কোন হরমোন উৎপন্ন হয়?
গর্ভধারণ করলে শরীরে বিটা এইচসিজি (HCG) নামে এক প্রকারের হরমোন উৎপন্ন হয়।
2. পিরিয়ড মিস হওয়ার কতদিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হবে?
পিরিয়ড মিস হওয়ার ৭-১০ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায় এবং যাদের অনিয়মিত পিরিওড হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রিয় বিষয় ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে করতে হবে।
৩. প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট কতটা সঠিক?
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট ৯৯% সঠিক রেজাল্ট দিয়ে থাকে।
৪. ঘরোয়া উপায়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট পদ্ধতি গুলি কি কি?
- লবণ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট
- টুথব্রাশ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট
- সাবান দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট
- ডিটারজেন্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট
যদিও ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে কেবলমাত্র ধারণা পাওয়া যায়। সঠিক রেজাল্টের জন্য আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ