সঙ্কটমোচন, নারীজাতিই পারেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় ঠেকাতে

 কৃষিকাজ প্রণালী প্রথম আবিষ্কার করেছিল মেয়েরা। সেই প্রাচীনকালে নিওলিথিক পর্যায়ের প্রারম্ভে যখন পুরুষরা জোট বেঁধে চলতো শিকার এবং সংগ্ৰহে। তখন অবসর সময়ে মহিলারা পর্যবেক্ষণ করতেন প্রকৃতির নানা রকম রহস্য। সেই পর্যবেক্ষণেই একদিন হঠাৎ আবিষ্কার হয় নতুন উদ্ভিদ জন্মের রহস্য-প্রণালী। কৃষিকাজ আবিষ্কার আদিম সমাজ জীবনে এক বিপ্লব এনে দিয়েছিল। এর পর থেকে মানুষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।



ধীরে ধীরে সমাজ জীবন পরিবর্তন হয়েছে। শিল্পায়ন, নগরায়ন ঘটেছে। সমাজব্যবস্থা সরল থেকে জটিল, ক্রমে আরোও জটিল হয়েছে। সমাজ যতই পরিবর্তিত হয়েছে সমাজে নারীর ভূমিকাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। দায়িত্ব সামলানোর ক্ষেত্রে মহিলারা সব দিনই পুরুষদের চেয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে। সংসারের কাজকর্ম, সন্তান,স্বামীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাহ্যিক জগতের কাজেও সমানভাবে পারদর্শী নারী।
আধুনিক বিশ্বে দেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মহিলা। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নারীরা। সেনাবাহিনীর উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন নারী। বিজ্ঞানী থেকে চিকিৎসক, শিক্ষক থেকে পাইলট সর্বত্র নারীজাতির জয়জয়কার। বিশ্বের সামনে যখনই কোনো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে, পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাধান খুঁজেছেন নারীজাতি এবং সমস্যার সমাধান করেছেনও। এই যেমন ২০১৯ এ বিশ্বে হঠাৎ আগত করোনা মহামারীর ভয়ঙ্কর তান্ডবের থেকে বিশ্বব্যাসীকে রক্ষার্থে মহিলা বিজ্ঞানীদের জুড়ি মেলা ভার। ইংল্যান্ডের ড.সারা গিলবার্ট অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।


আধুনিক বিশ্বের সামনে আরোও এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হয়তো আসতে চলেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে। এর পরিণাম কি হবে, তার প্রামাণ্য তথ্য ভূবিজ্ঞানীদের কাছে খুব বেশি নাই। দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্বের হাজারো তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীগণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা সভার আয়োজন করছেন। কত শত চুক্তি সাক্ষর হচ্ছে, শপথ করছেন, সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করছেন বিভিন্ন পরিকল্পনা। অমুক দেশ এত বছরে কার্বন মুক্ত হবে। তশুক দেশ তত বছরে গ্ৰস কার্বন মুক্ত হবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা 1.5 ডিগ্রীর বেশি বাড়তে দেওয়া হবে না। একদিকে এইসব ঘোষণা এবং দক্ষযজ্ঞ। অন্যদিকে ভুটান নামক দেশ অলরেডি কার্বন মুক্ত দেশে পরিণত হওয়া। কেমন যেন শোনায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর সঙ্কট থেকে নারীজাতিই আবার পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারেন। গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান স্লোগান মায়েরাই বাস্তবায়িত করতে পারেন সবচেয়ে ভালো। সুন্দরবনের বনজঙ্গল রক্ষার্থে যেভাবে স্থানীয় মায়েরাই এগিয়ে এসেছেন, যেভাবে সদ্য পদ্মশ্রী প্রাপক পরিবেশকর্মী কর্ণাটকের তুলসী গৌড়া দীর্ঘ 6 দশক ধরে প্রায় 30,000 চারাগাছ রোপণ করেছেন, লালনপালন করেছেন, বড়ো করে তুলেছেন, সেভাবেই বিশ্বের সমস্ত মায়েদের এগিয়ে আসতেই হবে ভবিষ্যতের ভয়ঙ্কর সঙ্কট থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষার্থে। পশ্চিমঘাট এবং পূর্বঘাট পর্বতমালায় উদ্ভিদ রক্ষার্থে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। হিমালয় পার্বত্য এলাকায় স্থানীয় উপজাতি মহিলারা উদ্ভিদ রক্ষায় এবং প্রযত্নে যথেষ্ট দায়িত্বশীল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ