আজ পঢ়ুয়া অষ্টমী, গ্রাম-বাংলার এক অনন্য সামাজিক অনুষ্ঠান



আজ পঢ়ুয়া অষ্টমী। অনেকেই একে পৌড়া অষ্টমী বা প্রথমা অষ্টমী নামেও বলে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের এক বিশিষ্ট সামাজিক অনুষ্ঠান। বঙ্গের সূবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী অসংখ্য গ্রাম কিংবা শহরতলি জুড়ে মহাসমারোহে পালিত হয় এই সামাজিক উৎসব।

অগ্ৰহায়ণ মাসে রাসপূর্ণিমার সাতদিন পর অষ্টম দিনে অর্থাৎ অষ্টমী তিথিতে বাড়ীর বড় সন্তানের কল্যাণ কামনায় মা-কাকিমারা এই পুজো করে থাকেন। বড় সন্তান পুত্র কিংবা কন্যা যে কেউই হতে পারে। এক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক কোনোরকম ভেদাভেদ থাকে না। এই লৌকিক উৎসবের রীতি অনুযায়ী, ফুল চন্দন, এমনকি নতুন পোশাক আসে মামার বাড়ি থেকে। মামার বাড়ীর কোনো সদস্য কিংবা স্বয়ং মামাই উক্ত দ্রব্যাদি নিয়ে আসেন, এছাড়া বাড়ী থেকেও নতুন পোশাক আনা হয়। বাড়ীর তুলশী মঞ্চের সামনে বিরির বড়ি কিংবা গোরু(গাই)-র গোবর বড়ির মতো বসানো হয়। এক্ষেত্রে গাইকেও পঢ়ুয়া(বড়) হতে হবে।  তারপর তাতে হলুদ, চন্দন এবং ঘুনসী (লাল রঙের এক দড়ির মতো দেখতে রেশমের দ্রব্য, যা কোমরে পরিধান করা হয়) রাখা হয়। 

বাড়ীর বড় সন্তান ছাড়াও অষ্টম সন্তানের (যেহেতু ভগবান কৃষ্ণ দৈবকির অষ্টম সন্তান ছিলেন) জন্যও আরাধনা করা হয়। তাদের হলুদ এবং তেল মেখে স্নান করতে হয়। ঐদিন রীতিমতে পঢ়ুয়াদের মুড়ি খাওয়া বারণ, যদিও এই প্রথার অনেকটাই বিলুপ্তি ঘটেছে। বাড়ীতে পিঠে, পায়েস, লুচি হালুয়া তৈরি হয়। মা-কাকিমারা ঐ তুলশী মঞ্চে পুজো করেন, তারপর ঐ নতুন পোশাক পরিধান করেন পঢ়ুয়ারা।

বাড়ীর কোনো বউ যদি পঢ়ুয়া হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তাঁর জন্যও পুজো হয়। তবে এক্ষেত্রে মামাবাড়ি থেকে ফুল-চন্দন উপহার আসতেই হবে এমন কোনো নিয়ম নাই। তবে অনেকেই এই প্রথা মেনে চলেন। 

বহুক্ষেত্রে পঢ়ুয়া ব্যক্তির পুজো ওর মামা বাড়ীতেও হয় সেক্ষেত্রে মামা বাড়ি থেকে ফুল-চন্দন ইত্যাদি আনার প্রয়োজন নাই। 

পুজো হবার পর ফুলচালদূর্বা দিয়ে পঢ়ুয়াদের আশির্বাদ করা হয়। শঙ্খধ্বনি চলতে থাকে। কখনো কখনো কানে গুঁজে দেওয়া হয় গাঁদা ফুল।

বহুল প্রচলিত বাংলার এই নিতান্ত সহজ সরল সামাজিক অনুষ্ঠানটির সরল্যপনাই একে এক অনন্য উৎসবে রূপান্তরিত করেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ