"সি. ডি. এস" বা "চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ" এই পদটি দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদ কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় থেকে শুরু হয়নি। ১৯৪৭ এ স্বাধীনতার পর দেশ প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং চিনের সঙ্গে সময়ে সময়ে নিজস্ব টেরিটোরি রক্ষার্থে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ভারত। এই যুদ্ধ কার্গিল যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই কার্গিল যুদ্ধে ভারত সফলভাবে পাকিস্তানের থেকে নিজস্ব সার্বভৌম অঞ্চল দখল করলেও এর বিনিময়ে বহু বীর ভারতীয় সৈন্যের আত্মবলিদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ভারত মা তাঁর বীর সন্তানদের হারিয়েছেন। এই যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী এবং এয়ার ফোর্সের মধ্যে যথাযথ যোগাযোগের অভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রতি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক থাকলেও তিন বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো পদের অভাব অনুভব করে দেশ। যদিও মহামান্য রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধান কিন্তু তিনি প্রতীকি প্রধান।
সেই কোঅর্ডিনেশন এর সমস্যা দূরীকরণে ১৯৯৯ সালে কার্গিল রিভিউ কমিটি তাঁদের সুপারিশে এই ধরনের এক সুপারিশ করেন। তাঁদের রিভিউ পর্যালোচনা করার পর ২০০১ সালে তৎকালীন এন.ডি.এ মন্ত্রীসভা এই পদ গঠনের সুপারিশ করে। দেশের প্রতিরক্ষাকে আরোও মজবুত করতে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বিষয়ক ডিসিশন নেওয়ার জন্য এই ধরনের পদ থাকা জরুরি।
তারপর অনেক জল বয়ে গেছে গঙ্গায়, ভারতের বুক চিরে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষনে এই পদে নিয়োগের ঘোষণা করেন। তিনি বলেন সি.ডি.এস হবেন দেশের সেনাবাহিনীর প্রধান উপদেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা দপ্তর সহ তিন বাহিনীর প্রধানদের পরামর্শ দেওয়ার কাজ করবেন তিনি। পদমর্যাদা দেশের তিন বাহিনীর প্রধানদের সমতূল্য।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের প্রথম সি.ডি.এস হিসেবে দায়িত্ব পান স্থলবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান বিপিন রাওয়াত। যাঁর জন্ম উত্তরাখণ্ডের পাউরিতে, ১৯৫৮ সালের ১৬ই মার্চ। পিতা লক্ষণ রাওয়াত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। জেনারেল বিপিন রাওয়াত ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি(দেরাদুন), ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ এবং হাইকমান্ড ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট লিভেনওয়ার্থ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমান্ড এবং জেনারেল স্টাফ অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে। তারপর নিজস্ব কর্মগুণে এবং দক্ষতায় দেশের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি সি. ডি. এস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যও ছিলেন। তিনি কাশ্মীর এবং উত্তরপূর্ব ভারতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন করেন এবং বিভিন্ন অপারেশন এ নেতৃত্ব দেন এবং সাফল্য অর্জন করেন। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাঁর কর্মজীবনে তিনি প্রভুত সফলতা লাভ করেন। ৪২ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনীতে পরিষেবা দেবার জন্য তাঁকে ভারত সরকার থেকে বিভিন্ন পদকে সম্মানিত করা হয়েছেহয়েছে, বীরত্বের বিভিন্ন সম্মান পেয়েছেন।
অতিসম্প্রতি এক মর্মান্তিক চপার দূর্ঘটনায় দেশ তাঁর একাধিক বীর সৈন্যদের হারিয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন দেশের এই বীর সন্তান বিপিন রাওয়াত। দেশসেবায় নিয়োজিত বীর সন্তান এদিন বিশেষ কার্যে দিল্লি থেকে কেরালা যাচ্ছিলেন বায়ুসেনার চপার MI-17V5 এ। তামিলনাড়ুর নীলগিরি অঞ্চলে কুন্নুরের কাছে দূর্ঘটনায় চপারে থাকা ১৪ জন যাত্রীর ১৩ জন প্রয়াত হন। বিপিন রাওয়াত এবং তাঁর সহধর্মিনী ছিলেন এই চপারে। দূর্ঘটনায় তাঁরাও প্রয়াত হন। ভারত মায়ের বীর সৈন্য'র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
0 মন্তব্যসমূহ