স্থানীয়দের মুখ থেকে শোনা তথ্যের ভিত্তিতে সিরিজটি চলছে। এক বয়স্ক স্থানীয় ব্যক্তির মতে, তাদের 'বলা' কাহিনী/তথ্য তারাও স্বচক্ষে দেখেননি,তবে শুনেছেন তাঁদের বাবা_ঠাকুরদার কাছ থেকে। ওড়িশা লাগোয়া প্রত্যন্ত গ্রামের এই লোককথা বহু প্রজন্ম ধরেই মুখে মুখে ঠাকুরদা থেকে বাবা হয়ে পুত্র,তারপর পুত্রের সন্তান_সন্ততি,নাতি_নাতনীদের মধ্যে ছড়িয়েছে। কত প্রজন্ম ধরে এই লোককথা ছড়ানো তাও অজানা।
শরশঙ্কা দীঘির জল কখনো শুকোয়নি। বিভিন্ন সময়ে কতবার কাঠফাটা খরা হয়েছে বঙ্গে। এলাকায় কতবার বহুদিন ধরে বৃষ্টি হয়নি। অন্যান্য পুকুর_দীঘির জল একেবারে নিঃশেষ তীব্র তাপদাহে।
কিন্তু ঐ অঞ্চলে ঐ দীঘির জল কখনো প্রাকৃতিক ভাবে শুকোয়নি এমনকি মানুষ চেষ্টা করেও জল নিষ্কাশন করতে পারেনি। স্থানীয়রা মনে করেন,ঐ দীঘির মাঝখানে একটা জলে ডুবন্ত মন্দির আছে। নাকি মা শীতলা দেবীর মন্দির। তার চারিদিকে লোহার বেড়াও দেওয়া আছে। এই শীতলা মা খুব জাগ্ৰত। এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল মায়ের সাহায্যকারী প্রকৃতি। বর্তমানে আধুনিক যুগে বাড়ীর বিয়ে হোক কিংবা শিশুর মুখে ভাত( কিংবা অন্নপ্রাশন),একটা অনুষ্ঠান করতে গেলে গৃহস্থকে ডেকোরেটরকে আহ্বান জানাতে হবেই। গৃহসজ্জা সামগ্রী থেকে শুরু করে রান্নার আসবাবপত্র এই যেমন কড়াই, খুনতি, গামলা, ডেকচি, পাতা, বাটি চামচ ইত্যাদি সবই ঐ ডেকোরেটরম্যানকে আনতে হবে। তার বিনিময়ে যথেষ্ট মূল্যও পান তিনি। কিন্তু প্রাচীনকালে একসময় এই ডেকোরেটর প্রথা ছিল না। কিন্তু বাড়ীতে অসংখ্য অনুষ্ঠান হতোই। সেক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী বাড়ীগুলো থেকে বড় কড়াই ইত্যাদি ম্যানেজ করা গেলেও অতিথিদের খাবার পরিবেশনের জন্য এত পরিমাণ থালা, বাটি সংগ্রহ করা খুব মুশকিল। স্থানীয়দের এই সমস্যা সমাধানে একদিন স্থানীয় এক ব্রাহ্মণের স্বপ্নে মা দেখা দেন এবং সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেন।
তারপর থেকে শরশঙ্কা তৎসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলেই সব গৃহস্থ এসে পৌঁছাতেন শরশঙ্কা দীঘির পান্ডব ঘাটে। নিয়ম অনুযায়ী, একটা কাঁচা সুপারি এবং একটা কাগজে প্রয়োজনীয় থালা ও বাটির সংখ্যা লিখে রাতের বেলায় পান্ডব ঘাটে রাখতে হবে এবং মনে মনে শীতলা মা'কে স্মরণ করতে হবে। পরদিন সকালে ঐ সুপারি সহ কাগজ উধাও হয়ে যাবে এবং তার বদলে কাগজে লিখিত সংখ্যক থালা ও বাটি ঐ জায়গায় থাকবে। ব্যবহারের পর ঐ আসবাবপত্র সুন্দর করে পরিষ্কার করে পুনরায় রাতে ঐ একই স্থানে রেখে দিলে পরদিন সুপারি এবং কাগজ ঐ জায়গায় এসে যাবে এবং উধাও হয়ে যাবে ঐ থালা_বাসন বাটি ইত্যাদি। এই প্রথা বহুদিন যাবৎ চলছিল।
কিন্তু বর্তমানে এই আশ্চর্য ব্যাপার হয় না কেন?
তার উত্তরে স্থানীয়দের দাবী এক লোভী ব্রাক্ষ্মণ এর জন্য মা ক্রোধে আর সাহায্য করেন না। স্থানীয় এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। যিনি বাড়ীর অনুষ্ঠানে একটা বড় কাঁসার কলসি সহ থালা,বাটি, অন্যান্য বাসনপত্র নিয়ে গেছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি কর্তব্য মতো সবকিছু ফিরিয়ে দিয়ে যান কিন্তু কাঁসার কলসির লোভ ত্যাগ করতে পারেননি, তিনি নাকি মনে করেন যে তিনি ব্রাক্ষ্মণ মানুষ দেবতা দেবীদের সেবক, এতদিনের ঈশ্বর সেবা স্বরূপ ওই কলসি রেখে দিলে কোনো সমস্যা হবে না। তাই তিনি কলসি দেননি। পান্ডব ঘাট থেকে থালা ও অন্যান্য আসবাবপত্র উধাও হলেও প্রথা মতো সুপারি ও লিখিত কাগজ খানা কিন্তু ফেরত আসেনি।
এরপর থেকে আরোও অনেক গৃহস্থ ব্যক্তি তাদের অনুষ্ঠানে সাহায্যের প্রার্থনা করেও সাহায্য পাননি। তারপর অনেক দিন ধরে কেউই আর হয়তো চেষ্টা করেননি। এই বাস্তব একটা কাহিনী হয়ে যুগ যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে স্থানীয় লোককথা হয়ে প্রচারিত হচ্ছে।
বিঃদ্রঃ - সম্পূর্ণ তথ্য প্রচলিত লোককথা ও লোককাহিনী অনুসারে বিবৃত। এলাকার বয়স্ক মানুষদের মুখে প্রচলিত কাহিনীকেই লেখ্য রূপ দেওয়া হয়েছে। লেখকের শোনা প্রচলিত কাহিনীর ভিত্তিতেই লেখক এই 'পরিচ্ছদ' লিখেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ