বেড়াতে যেতে কারই না ভালো লাগে! আমরা সবাই মোটামুটি একটু আধটু ভ্রমণ পিপাসু হয়েই থাকি। পাহাড়, পর্বত, নদী, সমুদ্র সবসময় কাছে টানে ভ্রমণপিপাসুদের। পাহাড়ের সৌন্দর্য কিংবা নদীর জলের স্রোত অথবা সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের লুকোচুরি চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে আমাদের কাছে। কেউ কেউ কখনো কখনো দু এক লাইন কবিতাও গুনগুনিয়ে আওড়াতে থাকে।
আজ আমি আপনাদের জানাবো, পশ্চিমবঙ্গের এক পরিচিত নদীর এক অপরিচিত ভ্রমণ কেন্দ্র। ঝাড়খন্ডের খামারপোত পাহাড় থেকে উৎপন্ন সুবর্ণরেখা নদী। তারপর পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে উড়িষ্যা চিরে তরতর করে বয়ে চলেছে বঙ্গোপসাগরে। ঝাড়খন্ডে এই নদীতেই রয়েছে বিখ্যাত হুড্রু জলপ্রপাত। নদীটি পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়েছে অনেকটাই। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের থেকে প্রায় ৭৫.৫ কিমি দক্ষিণে দাঁতন অবস্থিত। NH 60 ধরে বেলদা হয়ে দাঁতনে আসা যায়। দাঁতনে ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে পশ্চিমে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বে নদী তীরবর্তী গ্রাম সমূহ-মানিক ডাঙা, বেলমুলা,বাঘড়া ইত্যাদি অবস্থান করছে। বেলমুলাতে বেশ ভালো মাপে টুরিস্ট স্পট গড়ে উঠেছে। নদী পেরোলেই ওদিকে উড়িষ্যার গ্রাম। বর্ষার ভরা মরশুমে নৌকার ব্যবস্থা থাকে অনবরত। গ্রীষ্মে নদীর জল কমে গেলে নদীর উপর দিয়ে কাঠ ও বাঁশের শক্তপোক্ত সেতু তৈরি করে গ্রামবাসীরা। সেতুর দ্বারাই চলে যাতায়াত। নদী তীর বরাবর বিঘার পর বিঘা জমিতে শরতে কাশফুলের সমারোহ দেখা যায়। পাশ্ববর্তী স্থানে বেশ শান্ত এবং নিস্তব্ধ জঙ্গল আছে। ঐখানে সহজেই বনভোজনের আয়োজন করা যেতে পারে। নতুন একটা পার্ক গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দিন হল। নাম :- Golden Line Eco-Park. রংবেরঙের ফুলগাছ এবং অসংখ্য ফল গাছে আবৃত এই পার্ক বেশ সময় কাটানোর উপযুক্ত স্থান। নিস্তব্ধ অরণ্যানীর বুকে বনভোজনের আনন্দের পাশাপাশি স্বর্ণরেণুর সোনা মাখা জলে ডুব দিয়ে যে অপূর্ব তৃপ্তি জুটবে তা কথায় প্রকাশ করা একপ্রকার অসম্ভব। চাইলে যেতে পারেন বর্ডার লাগোয়া উড়িষ্যার গ্রামগুলিতে। নিতান্তই ভ্রমণের জন্য গেলে একটু দূরত্বে হোটেলের সুস্বাদু ঘরোয়া রান্নার স্বাদও উপভোগ করতে পারবেন। আর যদি সূর্যাস্ত দেখতে চান তাহলে সূর্যাস্তের সময় মোহিত সূবর্ণরেখার সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেন। সর্ষেক্ষেতের হলুদ ফুলের বাহার, শীতে সারি সারি ফুলকপি এবং বাঁধাকপি বাগানের মাঝে দু একটা সেলফিও তুলে নিতে পারেন নিজের অজান্তেই।
আঁকাবাঁকা স্রোতের মনমুগ্ধকর পরিবেশ, নিস্তব্ধ অরণ্যানী আপনার শহুরে জীবনের জটিলতা কাটিয়ে আপনাকে নতুন ভাবে গড়ে তুলবে।
অতি অল্প বাজেটেই নিজের দ্বিচক্রযানেও ঘুরে আসতে পারেন বেলমুলা।
0 মন্তব্যসমূহ