বেড়াতে যেতে কারই না ভালো লাগে! আমরা সবাই মোটামুটি একটু আধটু ভ্রমণ পিপাসু হয়েই থাকি। পাহাড়, পর্বত, নদী, সমুদ্র সবসময় কাছে টানে ভ্রমণপিপাসুদের। পাহাড়ের সৌন্দর্য কিংবা নদীর জলের স্রোত অথবা সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের লুকোচুরি চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে আমাদের কাছে। কেউ কেউ কখনো কখনো দু এক লাইন কবিতাও গুনগুনিয়ে আওড়াতে থাকে।
আজকের পর্বে আপনাদের বলবো ঐতিহাসিক এক দীঘির কাহিনী। তার সৃষ্টি এবং সৌন্দর্য।
তখন বঙ্গদেশের শাসক রাজা শশাঙ্ক। তিনি মাকে সঙ্গে নিয়ে হয়তো উড়িষ্যা জগন্নাথ দর্শনে যাচ্ছিলেন বা জগন্নাথ দর্শন করে ফিরছিলেন। তারা এই গ্রামে বিশ্রামের জন্য ঘাঁটি গাড়েন। এই গ্রামের মানুষদের আন্তরিকতায় নৃপতি সহ তাঁর মাতা খুবই প্রসন্ন হন। উৎসুক চিত্তে এলাকার কাহিনীও শুনেছেন হয়তো। যখন জানতে পারেন এলাকায় খুব উর্বর জমি থাকা সত্ত্বেও ভালো চাষাবাদ হয়না তখন এর কারণ জানতে পান পর্যাপ্ত জলের অভাব। পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয় বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যে। তার উপর চাষাবাদ। শশাঙ্ককে এই সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কিছু সাহায্য করতে পারেন কিনা জিজ্ঞাসা করেন। মহারাজ তৎক্ষণাৎ তাঁর সবচেয়ে ভারী তুণ (তির) টি ছোঁড়েন। যতদূর অবধি উহা যায় ততদূর অব্দি পুষ্করিণী খনন হবে। সেই থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে ঐতিহাসিক শরশঙ্কা দীঘির খননকার্য সম্পূর্ণ হয়। রাজা শশাঙ্কের নামানুসারে নতুন নাম হয় শরশঙ্কা।
খড়্গপুরের থেকে বাসে বা ট্রেনে অথবা নিজস্ব দ্বিচক্রযানে বেলদা হয়ে দাঁতনে(সরাই বাজার)( ট্রেনে হলে দাঁতন রেলওয়ে স্টেশন) নেমে পূর্ব দিকে চার/পাঁচ কিমি। দাঁতনেই পেয়ে যাবেন ট্রেকার অথবা অটোরিক্সা। ওতে করে 7/8 মিনিটের রাস্তা। তারপর শরশঙ্কা ফুটবল মাঠ বললেই আপনাকে পৌঁছে দেবে দীঘির উত্তর প্রান্তে। নেমে পড়ুন ওখানে। ওখান থেকে তাকালেই সামনে 500 মিটার সবুজ মাঠের পর সাদা বিস্তৃত জলরাশি। এ-কূলে দাঁড়িয়ে,ও-কূল দেখা যায় অস্পষ্ট। চারদিকে নারকেল সহ বেশকিছু কাষ্ঠল বৃক্ষের সমাহার লক্ষণীয়। দীঘির পূর্বে ভূমি বেশ উচ্চ হলেও এমনভাবে ঢেউখেলানো রকমে সুসজ্জিত রয়েছে দেখলে বেশ চমৎকার লাগে। একসময় দীঘির জল সম্পূর্ণ স্বচ্চ এবং পরিষ্কার থাকলেও মাজাঘষার অভাবে জলে কচুরিপানা এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ জন্মেছে। যদিও তা এই দীঘির শোভা কিছুটা বাড়িয়েছেও বলা পারে। দীঘির তীরে সূর্য ডোবার সময়ে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের আভাস পাওয়া যায়। পরিযায়ী পাখিরা তীরে এবং মাঝে উড়তে থাকে। খুব সুন্দর লাগে।
লাগোয়া বেশকিছু মন্দির ও মাজার রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে পীর দেওয়ানগঞ্জের মাজার। পৌষ সংক্রান্তির দিন তাঁর কবরে মাটি দিতে আসেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। শরশঙ্কার আরোও এক বিশেষত্ব হল এখানে বেশ বড়ো মাপের মেলা বসে পৌষ সংক্রান্তির দিনে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত সহ পাশ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশা থেকেও শয়ে শয়ে দর্শনার্থী আসেন মেলা পরিভ্রমণে।
সেখানে রয়েছে পান্ডব ঘাট।মাজারের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য মন্দির।
জগন্নাথ মন্দির, জটেশ্বর শিব ,ঝিঙ্গেশ্বর শিব, রামেশ্বর শিব,কালী ও শীতলা মন্দিরও রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কালী মন্দিরে মূলত পুজো দেন পৌষ সংক্রান্তির দিন।
প্রকৃতির কোলে শান্ত বিকেলে বেশ ভালোই সময় কাটবে শরশঙ্কায়।
0 মন্তব্যসমূহ