![]() |
কমল কিশোর মন্ডল, সংগ্রহীত ছবি |
Kamal Kishor Mondal Success Story: পৌঢ়ত্বে জীবন ভেলকি দেখালো বিহারের কমল কিশোর মন্ডলের সঙ্গে। যদিও শুধু ভাগ্য নয়, কমল কিশোরের নাছোড়বান্দা জেদ এবং পরিশ্রমেই সে পিওন থেকে হয়ে উঠলো প্রফেসর। কিছুদিন আগে অবধিও যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসরদের টেবিলে চা,কফি, জল, বইপত্র ইত্যাদি পৌঁছে দিতেন কমল কিশোর নামে এক ব্যক্তি, এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর তিনি।
পারিবারিক অনটনের জেরে কলেজ পাশের পরেই কমল কিশোরকে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়েছিল। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। বাড়ীর আর্থিক অনটনে সাহায্য করার জন্য, বাবার ছোট্ট চা দোকানের দায়িত্ব সামলেছেন। এমনকি তিনি নাইট গার্ডের ডিউটিও করেছেন। একদিন হঠাৎ করেই তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিওনের চাকরির প্রস্তাব আসে। চাকরিটা নিয়ে নেন তিনি।
কমল কিশোরের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। বিভিন্ন কাজের ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দেখে তার মনেও পড়াশোনার এক অমোঘ তাগিদ জন্মায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে তিনি এম.এ পড়া শুরু করে দেন। দুই বছরের এম.এ ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি পি.এইচ.ডি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পি.এইচ.ডি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাভের জন্য তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর অদম্য ইচ্ছের কাছে হার মানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালের শুরু করেন পিএইচডি। গবেষণা শেষ করতে সময় লাগে চার বছর। এরপরেই তিনি নেট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেন। নেট পরীক্ষায় পাশ করার পর লেকচারার পদের জন্য আবেদন করা শুরু করেন।
জীবনে যত কঠিন পরিস্থিতি সামনে আসুক না কেন, সামনে থেকে লড়াই করলে একসময় জয় আসবেই তা প্রমাণ করলেন কমল কিশোর। ২০২০ সালে বিহার স্টেট ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের জন্য চারটি শূন্যপদ রয়েছে। নিজের পুরনো কর্মক্ষেত্রেই অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের লোভ সামলাতে পারেননি কমল কিশোর। তিনি ওই শূন্যপদে আবেদন করেন। সম্প্রতি রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে এবং তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হয়েছেন।
সদ্য যৌবনে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার পূর্ণতা প্রাপ্তি হলো ৪২ বছর বয়সে এসে। ২২ এ না হলেও ৪২ এ তিনি স্বপ্ন পূরণ করলেন। সেই সঙ্গে আগামীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য একজন মূর্ত প্রতীক হয়ে রয়ে গেলেন তিনি। তাঁর একনিষ্ঠ পরিশ্রম, তার দায়িত্বের মূল্যবোধের কাছে হয়তো ঈশ্বরও হার মেনেছেন। তার সাফল্যে পরিবারের সঙ্গে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও।
0 মন্তব্যসমূহ