গত প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতি, বিশ্ব রাজনীতি এমনকি বিশ্বের মানুষদের সামাজিক জীবনও একটি অদৃশ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীবাণু তথা ভাইরাসের মর্জিতে চলছে।করোনা ভাইরাস যার অফিসিয়াল নাম কোভিড ১৯ । এই ভাইরাস সময়ে সময়ে স্ব-খেয়ালেই স্ট্রেন পরিবর্তন করে নতুন নতুন রূপে ধ্বংসলীলা রচনা করেছে বিশ্বে। এর পূর্বে আলফা, গামা কিংবা ডেল্টার মতো স্ট্রেনের পর এবার নতুন এক স্ট্রেনে মিউটেট করেছে ভয়ঙ্কর ভাইরাসটি। দক্ষিণ আফ্রিকায় সরকারি ভাবে ২৪ নভেম্বর প্রথম এই নতুন ভেরিয়েন্টটির কথা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। WHO কর্তৃক প্রদত্ত নাম B.1.1.529 যাকে "ওমিক্রন" নামে ডাকনাম দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণরূপে সমস্ত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি কিন্তু যেটুকু পাওয়া গেছে তা থেকে অনুমান করা হচ্ছে এখনও পর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্টটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। টীকা নেওয়া থাকলেও এই স্ট্রেনের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না, বলে খবর।
ইতিমধ্যেই পশ্চিমী দেশসমূহ দক্ষিণ আফ্রিকা সহ অন্যান্য আফ্রিকান দেশসমূহের সঙ্গে উড়ানপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক উড়ান ব্যবস্থা বন্ধ। যাতে মানুষে মানুষে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দরিদ্র আফ্রিকান দেশসমূহ প্রবল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। যদিও এই চরম পরিস্থিতিতে বিশ্বের দুই সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারত এবং চিন এগিয়ে এসেছে আফ্রিকান দেশগুলোর সাহায্যার্থে। ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে টেস্টিং কিট, অক্সিজেন, ঔষধপত্র সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাঠানো হবে খুব দ্রুত বেগে। চিন সরকার ভ্যাকসিন পাঠানোর এবং আর্থিক সহযোগিতা করার কথা ঘোষণা করেছে।
আমেরিকার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা মর্ডানা জানিয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন ডেল্টা স্ট্রেনকে ঠেকাতে বহুলাংশে সফল হলেও এই নতুন ওমিক্রন-এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর তা বলা মুশকিল। অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা কিন্তু এখনও এবিষয়ে মুখ খোলেননি।
এই ভয়ঙ্কর স্ট্রেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেই প্রাচীন এবং প্রচলিত পন্থা যেমন দূরত্ব বিধি বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান এবং হাত স্যানিটাইজ করা ইত্যাদিতেই ভরসা দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারগণ।
ডাক্তারগণ জনগণকে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এই স্ট্রেন WHO কর্তৃক "ভেরিয়েন্ট অব কনসার্ন" বলে ঘোষিত হয়েছে, "ভেরিয়েন্ট অব প্যানিক" বলে নয়। উপযুক্ত ব্যবস্থা পালন করলে এর বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে মানবজাতির জয় অনিবার্য হবে।
বুস্টার ডোজ নেওয়ার কথা অনেক ডাক্তার বলেছেন। সম্পূর্ণ টিকাকরণ এবং বুস্টার ডোজ নেওয়া থাকলে করোনার যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়াই দেবে ভ্যাকসিন। তাছাড়াও এই নতুন স্ট্রেনের মতিগতি বুঝে ভ্যাকসিনের গঠনে পরিবর্তন করা যেতে পারে। সবই সময় সাপেক্ষ।
দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে প্রথম খবরে এলেও ধীরে ধীরে জাপান, নামিবিয়া এবং আফ্রিকার কিছু দেশেও এই স্ট্রেনে আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
0 মন্তব্যসমূহ