পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার 10 টি সবথেকে সেরা উপায় | পড়াশোনা মনে রাখার 10 টি সেরা উপায়


পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সঠিক উপায়

 পড়াশোনায় একেবারেই মন লাগছে না আমার, পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সঠিক উপায় কী? এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত আপনিও খুঁজেছেন অনেকবার কিন্তু পড়াশোনায় মন বসানোর সঠিক উপায় এখনও পাননি আপনি! তাহলে এই পোষ্টটি আপনাকে আপনার পড়াশোনা মন বসাতে অনেকটাই সাহায্য করবে।


শিক্ষা জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ। শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে পারে। একটা শিক্ষিত হৃদয় অমৃত নিঃসরণ করতে সক্ষম। সমাজের উন্নতি ও সাফল্যের জন্য প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠা প্রয়োজনীয়। 

শিক্ষা যেমনভাবে বই বা পুস্তক পাঠ করে লাভ করা যায় তেমনি সমাজের বিভিন্ন কাজকর্ম, সংস্কৃতি থেকেও প্রভূত অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা লাভ করা যায়।

তবে পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান থেকেই মূলত শিক্ষা লাভ বেশি হয়ে থাকে।

কিন্তু আজকালকার যুগে গেজেট ভিত্তিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ মানুষ বই থেকে অনেকাংশে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা সম্পন্ন হচ্ছে ট্যাবলেট কিংবা কম্পিউটারের পর্দায়। কিন্তু বই পড়ার যে উপকারিতা রয়েছে তা কখনো অন্য কোন মাধ্যম পূরণ করতে পারে না।


পড়াশোনায় মনোযোগী হবার বেশ কয়েকটি উপায় নিয়ে আজকের আমাদের নিবেদন।

১. লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে

২. রুটিন করে পড়া চাই

৩. POMODORY কৌশল ব্যবহার করুন

৪. POWERNAP কৌশল ব্যবহার করুন

৫. রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো

৬. একাধিক লক্ষ্য একসঙ্গে না নেওয়া

৭.  পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং ব্যায়াম-খেলাধুলা

৮. সুবিধা মতন সময় নিধরণ করুন

৯. প্রতিটি কাজের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করুন

১০. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন


আরো পড়ুন:- দ্রৌপদী মুর্মু কে, দ্রৌপদী মুর্মুর জীবন কাহিনী



১. লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে 

হিউম্যান সাইকোলজি বলে, লক্ষ্যে অবিচল ব্যক্তিরাই জীবনে চুড়ান্ত সফল হন। আমাদের বেশিরভাগ মানুষের তথা ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনায় মন না বসার কারণ, আমাদের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য থাকে না। আমরা পড়াশোনা কখনো সখনও করি বটে। কিন্তু নিছকই পরীক্ষায় পাশ করা বা ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্যই সবসময় চেষ্টা থাকে। এই সীমিত লক্ষ্যের কারণে কিছু দিন পড়াশোনার পর আর মন বসাতে পারে না বেশিরভাগ মানুষ।

এর জন্য একটা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য প্রস্তুত করা উচিত। প্রতিদিন নিয়ম করে একটু আধটু ধ্যান করা উচিত যাতে মন সংযোগ বৃদ্ধি পায়। 


২. রুটিন করে পড়া চাই। 

অনেকে আছেন যারা পড়েন হয়তো দিনে অনেক সময় ব্যয় করে এবং মনযোগী হয়েও কিন্তু তাও আত্মতুষ্টি ঘটে না। দিনের শেষে মনে হয় কিছুই পড়া হয়নি। এইরকম সমস্যা সমাধানের বেশ ভালো উপায় হল রুটিন করে পড়াশোনা করা।  অনেকের আবার সমস্যা হয় এই যে একদিন কিছু বিষয় পড়ার পর পরের দিন কী পড়বেন তা বুঝতেই পারেন না। সেক্ষেত্রে রুটিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। প্রতিদিন রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরেরদিনের জন্য নিজের জন্য অনুকূল একটা রুটিন তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাও পর্যবেক্ষণ করা জরুরি যে দিনের শেষে কতটা রুটিন মাফিক চলতে পেরেছেন।

সূর্য পূর্ব দিকে রুটিন মাফিক ওঠে, পশ্চিমদিকে অস্ত যায়, সেভাবেই মানুষকেও জীবন রুটিন মাফিক পরিচালিত করতে হবে। ( মাসে এক দুই দিন ব্যতিক্রম হতেই পারে, ওটা সমস্যার নয়, কিন্তু ওটা যেন সপ্তাহে একদিন না হয়) 

আবার মানুষের ব্রেন ৪০ মিনিট এর বেশি মনোযোগ রাখতে পারে না। তাই, বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়লে পড়াটা খুব ভালো হয়। 


৩. POMODORY কৌশল ব্যবহার করুন।

পমোডোরো হলো একটি পেনিস শক্ত, এটি ১৯৮০ সালে প্রথম ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলটি হলো, আপনি কোন একটি সময় নির্ধারণ করুন পড়ার জন্য, তারপরে আপনি একটানা ২৫ মিনিট পড়তে পারেন দিয়ে ৫ মিনিট ব্রেক নিন। আবার ২৫ মিনিট পড়ুন আবার ৫ মিনিট ব্রেক, এটিকে ২৫-৫ কৌশল বলা হয়। অথবা আপনি ৫০ মিনিট পড়াশোনা করে ১০ মিনিট ব্রেক নিতে পারেন। একটানা ২ ঘন্টা পড়ার পরে আপনি একটি ১৫ মিনিটে ব্রেক নিন। এই বিরতি নেয়ার সময় আপনি চা খেতে পারেন, সামান্য আড্ডা দিতে পারেন অথবা একটু ঘুরে আসতে পারেন, তবে ফোন কিংবা কম্পিউটার কখনোই ব্যবহার করবেনা।


৪. POWERNAP কৌশল ব্যবহার করুন।

পড়াশোনা করতে করতে কখনো যদি আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে নিজেকে কষ্ট দিয়ে ওই মুহূর্তে পড়াশোনা করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি ২৫-৩০ মিনিটের জন্য একটু ঘুমিয়ে নিন, ঘুমানোর পরে আবারো পড়তে বসুন পুনরায় আপনার পড়ার প্রতি আবারও মন লাগবে। এই কৌশলটিকে POWERNAP বলা হয়। ঘুমোনোর আগে কোন এলোমেলো চিন্তাভাবনা করবেন না।


৫. রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো।

ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে তার ছাপ স্পষ্ট পড়ে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে। কিন্তু বর্তমানে দেখা গেছে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী গভীর রাত্রি পর্যন্ত ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউবে সময় অতিবাহিত করে। তার ফলে দৈনন্দিন যে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমের দরকার তা তার শরীর পায় না। ফলস্বরূপ মস্তিষ্ক শান্ত হয় না। অশান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে পড়াশোনায় মনযোগী হওয়া যায় না।  ব্রেনকে শান্ত করতে রাতের ঘুম বেশি কার্যকর দিনের ঘুমের চাইতে। আপনার মাথা যদি শান্ত না থাকে তাহলে আপনি কোন কাজই ঠিকভাবে করতে পারবেন না। অতএব পর্যাপ্ত ঘুম পড়াশোনায় মনোযোগ আনার অন্যতম উপায়।


৬. একাধিক লক্ষ্য একসঙ্গে না নেওয়া।

একজন ব্যক্তি তাঁর জীবনে একইসঙ্গে একজন সফল বিজ্ঞানী, সফল ডাক্তার, সফল ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ কখনো হতে পারেন কি? প্রায় অসম্ভব এবং হাস্যকর ব্যাপার। তেমনি পড়াশোনার সময় একাধিক লক্ষ্য থাকা বা একাধিক কাজ করা একপ্রকার অসম্ভব। টিভির সামনে বই খুলে পড়ছেন কিংবা মোবাইলে ক্রিকেট স্কোর চেক করছেন সঙ্গে ফিজিক্সের মোটা বইটাও খোলা আছে। এটা ঠিক নয়। দুটো কাজেই ব্যাঘাত ঘটে। মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন শেষে ফোনেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পড়াশোনার সময় শুধুই পড়াশোনা। অন্য কিছুর জন্য অন্য সময় আছে। 


৭.  পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং ব্যায়াম-খেলাধুলা। 

শরীর সুস্থ থাকলে আর মন সুস্থ থাকলে সহজেই পড়াশোনায় মনযোগী হওয়া যায়। শরীরকে সুস্থ রাখতে সকালে একটু ধ্যান বা দু একটা ঘরোয়া ব্যায়াম করুন। পুষ্টিকর খাদ্য তথা প্রোটিন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খান। মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পারেন। বিকেলে একটু খেলাধুলা করুন বা দৌড়ান। তাতে শরীর ও মন সুস্থ থাকবে। আপনি মনযোগী হয়ে পড়তে পারেন।


৮. সুবিধা মতন সময় নিধরণ করুন।

সর্বোপরি, নির্দিষ্ট সময় পড়ার জন্য ঠিক করুন। অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত পড়তে পছন্দ করেন আবার অনেকে ভোর চারটে থেকে উঠে। নিজের পড়ালেখার জন্য পারফেক্ট সময় নিজে স্থির করুন এবং তেমনভাবে কাজ করুন। এছাড়াও চেয়ার টেবিলে পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করুন। অনেক সময় খাটে কিংবা বিছানায় পড়তে বসলে ঘুমের তন্দ্রা আসতে পারে, সেক্ষেত্রে অমনোযোগ ঘটতে পারে। তাই চেয়ার টেবিল ব্যবহার করতে শিখুন।  এছাড়াও প্রতিদিন ছোটছোট টার্গেট ঠিক করে পড়ুন।  নির্ধারিত টার্গেট পূরণ করলে নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করুন। বিভিন্ন পুরস্কার হতে পারে, যেমন আজ ইকোনমিক অমুক চ্যাপ্টার বিকেল।


৯. প্রতিটি কাজের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করুন।

প্রতিটি কাজের সফলতার জন্য নিজেকে নিজেই পুরস্কৃত করুন। অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই লক্ষ্য পরিপূর্ণ হলে নিজেকে নিজেই পুরস্কৃত করুন। ফলে আপনার মনোবল বাড়বে, এবং আপনি যে কোন কাজ করার জন্য আরও উৎসাহিত বোধ করবেন।


১০. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন।

কোন কাজ করার আগে ভেঙ্গে পড়বেন না নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন আপনি ওটা নিশ্চয়ই পারবেন। অনেক সময় গণিত কিংবা ইংরেজি পড়ার আগেই আমরা ভয় করতে থাকি, এই বিষয়টি হয়তো আমার দ্বারা সম্ভব নয়। এই ভয় টিকে দূর করে আপনার ভয়ের সাবজেক্টকে ভালবাসুন দেখবেন বিষয়টি আপনারও ভালো লাগতে শুরু করবে।


উপরিউক্ত পদক্ষেপ ঠিকঠাকভাবে পালন করুন এবং সর্বোপরি সমস্ত পদক্ষেপ কমপক্ষে ২১ দিন কষ্ট করে পালন করুন। কিছু দিনের মধ্যে যে চুড়ান্ত উন্নতি নিজের মধ্যে দেখতে পাবেন তা আপনিই অনুভব করতে পারবেন।




  • FAQ


1. পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর দশটি উপায়

১. লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে

২. রুটিন করে পড়া চাই

৩. POMODORY কৌশল ব্যবহার করুন।

৪. POWERNAP কৌশল ব্যবহার করুন।

৫. রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো

৬. একাধিক লক্ষ্য একসঙ্গে না নেওয়া

৭.  পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং ব্যায়াম-খেলাধুলা

৮. সুবিধা মতন সময় নিধরণ করুন

৯. প্রতিটি কাজের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করুন।

১০. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন


2. POMODORY কৌশল কী ?

কোন একটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ওই কাজটি কে ছোট ছোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, প্রতিটি পাঠ ২৫ মিনিট করে নিন, ২৫ মিনিট কাজ করার পরে আপনি ৫ মিনিটে ব্রেক নিল, আবারো ২৫ মিনিট কাজ করুন আবারো ৫ মিনিট ব্রেক নিন। এইভাবে চলতে থাকা কৌশলটিকে পমোডোরো বলা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ