চড়ক উৎসব ২০২৩ সময়সূচী | বাঙালির ‘চড়ক উৎসব’ ও তার ইতিহাস
কথায় বলে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। নতুন বছরকে অভ্যর্থনা জানানোর আগে, বাংলার শেষ উৎসব হল 'চড়ক উৎসব'। শহুরে জীবন যাপনের ভিড়ে আজও দূর দূরান্তের কোনও গ্রামে এই ‘গাজন উৎসব’ উদযাপনের চিত্র চোখে পড়ে। এই মিলনের উৎসবে সামিল হতে পারেন যে কোনও ধর্ম, জাতের মানুষ।
- চড়ক উৎসব ২০২৩ সময়সূচী
উৎসবের নাম | বাংলা তারিখ | ইংরেজি তারিখ | কোন দিন |
চড়ক উৎসব | ৩০ চৈত্র, ১৪২৯ | 14 এপ্রিল, 2023 | শুক্রবার |
চড়ক উৎসব অন্যান্য নাম:
চড়ক উৎসব এর অন্যান্য নাম গুলি হল নীল পূজা, হাজরহা পূজা ও হরব।
গাজন উৎসবের 'উৎপত্তি ইতিহাস'
পৌরাণিক তথ্য :-
শব্দটির উৎস 'গর্জন'থেকে। অনেকেই বলেন, শিবের আরাধনায় সন্ন্যাসীদের হুঙ্কার গাজন রূপে গণ্য করা হয়। আবার ধর্মমঙ্গল কাব্যে রানি রঞ্জাবতীকে দেখা যায়, নিজের ধর্মকে তুষ্ট করার লক্ষ্যে গাজন পালন করতে। চৈত্রমাসে তিরিশ দিন বেতের লাঠি নিয়ে শিবব্রতী হয়ে নাচ করলে শিবলোক প্রাপ্ত হয় বলে বিশ্বাস অনেকের। এভাবেই চড়ক অথবা গাজন উৎসব পালিত হয়। এই উৎসবের উৎপত্তি নিয়ে নানা মত রয়েছে। বান রাজা ছিলেন একজন শিবসাধক। শিবকে তুষ্ট করতে তপস্যাও করেছিলেন তিনি। তাঁর শিবভক্তির সূত্র ধরেই, আজও চড়কের সন্ন্যাসীরা বান ফোঁড়ান, নানা ধরনের ঝাঁপ দেন। যেমন, আগুনঝাঁপ, কাঁটাঝাঁপ, বঁটিঝাঁপ, ঝুলঝাঁপ, বানফোঁড়া, কপালফোঁড়া ইত্যাদি। নরমুণ্ড নিয়েও নৃত্যের প্রচলন দেখা যায়। অনেকে বলেন, সেই সময় থেকেই সন্ন্যাসীরা চড়কগাছে পাক খেতে পিঠে গামছা বেঁধে উঠতে শুরু করেন। তাছাড়াও, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিব-পার্বতী সেজে হাতে ভিক্ষা পাত্র নিয়ে বের হন। সারাদিন ঘুরে ঘুরে যা পান, সন্ধেয় তাঁরা পাক করা অন্ন গ্রহণ করেন।
অন্য ধর্মের যোগ:-
লোকমুখে প্রচলিত কথা অনুযায়ী,গাজন উৎসবে মধ্যে বৌদ্ধ প্রভাবও রয়েছে। যদিও এর তেমন কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ বা তথ্যাদি পাওয়া যায়নি।
সীমানা বাঁধার চেষ্টা:-
১৮৬৩ থেকে ১৮৬৫-র মধ্যে ছোটলাট বিডন এই প্রথা রোধ করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। আজও ঐতিহ্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে এই আনন্দ উৎসব।
রীতিনীতি ও বৈশিষ্ট্যাবলী:-
চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়ক উৎসব। শিব মন্দিরের কাছে কোনও পুকুরে একটি চড়ক গাছ ডুবিয়ে রাখা হয়। তার পরে সেই চড়কগাছটিকে পুজো করা হয়। এভাবেই শুরু হয় চড়কের আসল অনুষ্ঠান। কাঠের উঁচুতে আংটায় ঝুলে পড়েন দু'জন সন্ন্যাসী। সেখানেই ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে থাকেন তাঁরা। ঘুরতে ঘুরতে নীচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের দিকে ছুঁড়ে দেন বেল, কাঁচা আম ইত্যাদি ফল,ফুল, বাতাসা, কলমি শাক। ভিড় ঠেলে সেই ফল এবং শাক হাতে ধরাও ভাগ্যের বিষয় বলে চিরন্তন বিশ্বাস সকলের!
ভিন্ন দেশে ভিন্ন নাম :-
সমগ্ৰ বঙ্গে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব গাজন নামে বা চড়ক নামে পরিচিত। তবে মালদহে গাজনের নাম গম্ভীরা, জলপাইগুড়িতে এই উৎসব গমীরা নামে উৎযাপিত হয়।
বাংলার ছড়া গানেও এই বিশিষ্ট উৎসবের বর্ণনা পাওয়া যায়। ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই প্রায় শুনে থাকি,
"আমরা দুটি ভাই শিবের গাজন গাই।
ঠাকমা গেছেন গয়া কাশী ডুগডুগি বাজাই।"
গাজনের ছড়া। গাজনের গান।
- FAQ
1. কত সালে চড়ক উৎসব শুরু হয়, এই উৎসব কে শুরু করেন?
বিভিন্ন বই থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামে এক রাজা এই উৎসব প্রথম শুরু করেন।
2. চড়ক উৎসব অন্যান্য নাম গুলি কী কী?
চড়ক উৎসব এর অন্যান্য নাম গুলি হল নীল পূজা, হাজরহা পূজা ও হরব।
3. চড়ক উৎসব কোন ধর্মের মানুষ পালন করেন?
চড়ক উৎসব হিন্দু ধর্মের মানুষ পালন করেন।
4. চড়কের গান ?
“আমরা দুটি ভাই শিবের গাজন গাই।
ঠাকুমা গেছে গয়াকাশি ডুগডুগি বাজাই।”
0 মন্তব্যসমূহ